Uncategorized

পহেলা বৈশাখ নিয়ে নির্মলেন্দু গুণের কবিতা

পহেলা বৈশাখ নিয়ে কবি নির্মলেন্দু কবিতা

সূর্য সত্য, চন্দ্র সত্য, সত্য নববর্ষ

আমার কবিতায় বহুরূপে বহুবার সূর্যের প্রসঙ্গ

এসেছে। তার মানে এই নয় যে, আমি খুব সূর্য

প্রেমিক বা আমি সূর্যকে খুব ভালোবাসি।

 

তুলনামূলকভাবে সূর্যের চেয়ে চাঁদই বরং আমাকে

আনন্দ দিয়েছে বেশি। আমার কবিতায়, আমার

গানের মধ্যে আমি সূর্যের চেয়ে চাঁদের কথাই

বেশি বলেছি।

আমি রাগ করেছি চাঁদের সাথে,

মুখখানি সে দেয়নি ছুঁতে আমার হাতে।

 

 

 

বিশেষত পূর্ণিমার রাতে আকাশের চাঁদ

আমার খুব ভালো লাগে। ভীষণ, ভীষণ।

আকাশ উন্মাদ করা চাঁদের স্নিগ্ধরূপ

আমি লুকিয়েলুকিয়ে দেখি, একা একা।

 

একদিন গভীর রাতে, বিশ্ব যখন নিদ্রামগ্ন,

গগন মেঘে ভরা, তখন চাঁদ আমাকে,

সবার সামনে বলা যায় না এমন একটা ইঙ্গিত দিয়েছে।

আমি তার ইঙ্গিতের প্রতি আস্থা স্থাপন করে

চন্দ্রপৃষ্ঠে একটি ছোট্ট বাংলোবাড়ি তৈরি করেছি।

 

 

আমার মৃত্যু হলে, যদি কখনও হয়, হতেও তো পারে।

মৃত্যু কি কখনও কোনো জীবনকে ছাড়ে?

তখন আমি কোথায় যাবো?

ভাগ্যিস চাঁদ নামমাত্র মূল্যে তার আট শতাংশ জমি

আমাকে লিজ দিয়েছিল। তা না হলে ওরকম পশ এলাকায়

আমার কবিতাকুঞ্জ গড়া কখনও সম্ভব হতো না।

আমি জানি, সূর্যের চেয়ে চাঁদের ক্লাইমেটই আমার স্বাস্থ্যের

জন্য উপযোগী হবে।

 

 

 

তবে আপনারা ভুল বুঝবেন না আমাকে।

আমি সূর্যকেও ভালোবাসি, কম আর বেশি।

তার তেজ খুব বেশি হলেও,

তার প্রতি আস্থা আমার কম নয় মোটেও।

আমি জানি, আমি তাকে খুব প্রেমচোখে না দেখলেও,

তার প্রতি আমার কৃতজ্ঞতা অবিচল।

 

 

আমি জানি মেঘে, ঝড়ে বা ঘন কুয়াশায় যদি ঢেকে যায়

সৌরজগৎ, তারপরও সূর্য উঠবেই।

তার তো অমাবস্যার ছুটি নেই,

নেই পূর্ণিমার চাঁদের মতো মাসিকউল্লাস। কক্ষপথে ধাবমান

চঞ্চল চন্দ্রের মতো সে নয়। মহান বিজ্ঞানী

গ্যালিলিওর মতোই সে আপন অবস্থান

এবং আপন বিশ্বাসে স্থির, দীপ্যমান।

 

 আমি বিশ্বাস করি, যতদিন আকাশ আছে,

যতদিন চাঁদ আছে আকাশেযতদিন রবে

পদ্মামেঘনা, গৌরীগঙ্গা বহমান, ততদিন রবে

আকাশে সূর্য, মাটিতে শেখ মুজিবুর রহমান।

 

আর আমি? আমার গন্তব্যের কথা তো আমি

আগেই বলেছি। আমি চলে যাবো চাঁদের নদীর

তীরে তৈরি করা আমার কবিতাকুঞ্জে। সেখানে

আমার জন্য অপেক্ষা করে আছে কবিতার মতো

এক চন্দ্রমুখী নারী

 

আমি বিশ্বাস করি, মহাকাশে যত বিপর্যয়ই

ঘটুক না কেন,

কাল সকালে পুবের আকাশে সূর্য উঠবেই এবং

বাঙালি সাড়ম্বরে পালন করবেই তাদের প্রিয় নববর্ষ।

 

আমি তাকে উঠতেও দেখি না, ডুবতেও দেখি না বহুদিন।

তবু আমি সর্বপাপঘ্ন সূর্যকে বিশ্বাস করি এবং তাকে

মহাবিশ্বের সকল শক্তির অনন্য উৎস বলে মানি।

 

 পহেলা বৈশাখ নিয়ে কবি নির্মলেন্দু এর বিখ্যাত কবিতা

“আজ পাখির ডাক, আজ ফুলের ডাক,

 

আজ আকাশগঙ্গায় ঘুরপাক

 

আসে বৈশাখ, এলো বৈশাখ।

 

আজ ভালোবাসা উপুড় করেছে তার বুক,

 

তাইতো বৃক্ষে-বাতাসে ঘোর রেষারেষি;

 

আজ পাখপাখালির বুকে বাকবাকুম ছন্দ

 

তাইতো জীবে-অজীবে কামান্ধ মেশামেশি;

 

আজ যৌবনের মুখে কালবৈশাখীর গন্ধ

 

তাইতো দূরবেদূরের জনপ্রাণী নয় প্রতিবেশী;

 

আজ পাখির ডাক, আজ ফুলের ডাক

 

আজ ভালোবাসার মৌচাক।”

 

পহেলা বৈশাখ নিয়ে কবি নির্মানন্দের এর ছোট ছোট কবিতা

নিজের জলেই টলমল করে আঁখি,

তাই নিয়ে খুব বিব্রত হয়ে থাকি।

 

চেষ্টা করেও রাখতে পারি না ধরে

ভয় হয় আহা, এই বুঝি যায় পড়ে।

 

এমনিই আছি নদীমাতৃক দেশে,

অশ্রুনদীর সংখ্যা বাড়াবো শেষে?

 

আমার গঙ্গা আমার চোখেই থাক্

আসুক গ্রীষ্ম মাটিফাটা বৈশাখ।

 

দোষ নেই যদি তখন যায় সে ঝরে,

ততদিন তাকে রাখতেই হবে ধরে।

 

সেই লক্ষেই প্রস্তুতি করে সারা,

লুকিয়েছিলাম গোপন অশ্রুধারা।

 

কিন্তু কবির বিধি যদি হন বাম,

কিছুতে পূর্ণ হয় না মনস্কাম।

মানুষ তো নয় চিরসংযমে সাধা,

তাই তো চোখের অশ্রু মানে না বাধা।

 

আমার জলেই টলমল করে আঁখি,

তোমার চোখের অশ্রু কোথায় রাখি।

 

 পহেলা বৈশাখ নিয়ে কবি নির্মলেন্দু এর উক্তি

দুঃখকে স্বীকার করো না, –সর্বনাশ হয়ে যাবে

দুঃখ করো না, বাঁচো, প্রাণ রে বাঁচো

বাঁচার আনন্দে বাঁচো বাঁচো, বাঁচো এবং বাঁচো

জানি মাঝেমাঝেই তোমার দিকে হাত বাড়ায় দুঃখ,

তার কালো লোমশ হাত প্রায়ই তোমার বুক ভেদ করে

চলে যেতে চায়, তা যাক, তোমার বক্ষ যদি দুঃখের

নখরাঘাতে ছিন্নভিন্ন হয়; যদি গলগল করে রক্ত ঝরে,

তবু দুঃখের হাতকে তুমি প্রশ্রয় দিও না মুহূর্তের তরে

তার সাথে করমর্দন করো না, তাকে প্রত্যাখান করো

 

পহেলা বৈশাখ নিয়ে কবে নির্মলেন্দু  কিছু কবি কথা

য়তো ফুটেনি ফুল রবীন্দ্রসঙ্গীতে যত আছে,

হয়তো গাহেনি পাখি অন্তর উদাস করা সুরে

বনের কুসুমগুলি ঘিরে। আকাশে মেলিয়া আঁখি

তবুও ফুটেছে জবা,—দূরন্ত শিমুল গাছে গাছে,

তার তলে ভালোবেসে বসে আছে বসন্ত পথিক।

 

এলিয়ে পড়েছে হাওয়া, ত্বকে কী চঞ্চল শিহরন,

মন যেন দুপুরের ঘূর্ণিপাওয়া পাতা, ভালোবেসে

অনন্ত সঙ্গীত স্রোতে পাক খেয়ে, মৃত্তিকার বুকে

নিমজ্জিত হতে চায়। হায় কি আনন্দ জাগানিয়া।

 

এমন আগ্রাসী ঋতু থেকে যতই ফেরাই চোখ,

যতই এড়াতে চাই তাকে, দেখি সে অনতিক্রম্য।

বসন্ত কবির মতো রচে তার রম্য কাব্যখানি

নবীন পল্লবে, ফুলে ফুলে। বুঝি আমাকেও শেষে

গিলেছে খলনারী আপাদমস্তক ভালোবেসে।

 

আমি তাই লঘুচালে বন্দিলাম স্বরূপ তাহার,

সহজ অক্ষরবৃত্তে বাঙলার বসন্ত বাহার।

 

 উপরোক্ত আলোচনা থেকে সহজে বুঝতে পারবেন বাঙালির জাতীয় জীবনের একটি প্রধানের সর্বোচ্চ পহেলা বৈশাখ এবং এটি বাংলা মাসের প্রথম তারিখে পালন করা হয়ে থাকে এবং পহেলা বৈশাখের প্রবর্তন করেন সম্রাট আকবর. তাই এই উৎসবটি বাঙালির জাতীয় জীবনে অর্থাৎ বাংলাদেশের প্রত্যেক বছর বাংলা বছরের প্রত্যেক তারিখে পালন করা হয়ে থাকে.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *